হাওর ও হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের একটি অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ও পরিবেশগত অঞ্চল, যা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলায় বিস্তৃত-সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার ও সিলেট। ‘হাওর এলাকার মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৩৭৩টি হাওর রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ মিলিয়ন (২ কোটি)’ মানুষ বাস করে। এই অঞ্চল দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মিঠা পানির ও দেশীয় প্রজাতির মাছের অন্যতম প্রধান উৎস। এখানকার জলাভূমি বন্যপ্রাণী ও পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে এবং রামসার কনভেনশন ও Central Asian Flyway-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। হাওরাঞ্চল ইনল্যান্ড ফিশারি ইকোসিস্টেমের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং পরিবেশবান্ধব জীবিকাবিধির (eco-sensitive livelihood) মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এখানকার জীবনধারা, লোকসংস্কৃতি, গান, মাছধরার প্রথাগত পদ্ধতি এবং সামাজিক রীতিনীতি বহির্বিশ্বে ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার মতো সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এই অঞ্চল আন্তর্জাতিক পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রেও অপার সম্ভাবনা বহন করে। হাওরের সুরক্ষা ও উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত, বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ (SDG 1), ক্ষুধা নিরসন (SDG 2), জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা (SDG 13), এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ (SDG 15) এর লক্ষ্যগুলো পূরণে হাওরাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দেশের দারিদ্রের হার ১৮.৭ শতাংশ’ হলেও হাওর অঞ্চলের দারিদ্রের হার ২৯ শতাংশ’। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষাকালে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ফলে জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যা ও জলাবদ্ধতা, প্রায় প্রতি বছরই ফসল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, যা মানুষের জীবনকে করে তোলে অনিশ্চিত। তবুও এই অঞ্চলের মানুষ তাদের সংস্কৃতি, পারস্পারিক সহায়তা ও ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে টিকে আছে।
জীবিকার দিক থেকে হাওরের জনগোষ্ঠী প্রধানত বর্ষাকালে মাছ ধরা ও শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। এর পাশাপাশি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন পরিপূরক আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্ষাকালে নৌকা চালানো এবং নির্মাণ ও কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করাও সাধারণ জীবিকার অংশ। এ ছাড়া অনেক পরিবার প্রবাসী সদস্যদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এসব জীবিকা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও দুর্যোগের কারণে ক্রমাগত হুমকির মুখে রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন হাওর অঞ্চলে জলমহাল ব্যবস্থাপনায় চরম অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতা লক্ষ্য করা যায়, যার ফলে প্রকাশ্যে মাছ লুটপাটের পাশাপাশি সম্পূর্ন জলজ জীববৈচিত্র্যের উপর ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক জলমহালে স্থানীয় জনগণের বড় অংশ প্রকাশ্যে মাছ লুটে নেয়।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ২৮ ফেব্রুয়ারি কামান বিল থেকে হাজারো মানুষ প্রকাশ্যে মাছ ধরে নিয়ে যায়। একই উপজেলার বেথুর নদীর তিনটি জলমহাল থেকেও ৫ মার্চ মাছ লুট হয়, যেখানে ইজারাদারদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে-একজন যুব জমিয়ত ও অপরজন যুবদলের নেতা। জামালগঞ্জ উপজেলায় ৫ মার্চ আয়লা বিল থেকে মাছ লুট হয়। শাল্লা উপজেলায়ও ১ মার্চ জোয়ারিয়া জলমহাল, ৪ ও ৮ মার্চ সাতুয়া বিল, এবং ৮ মার্চ কলকলিয়া বিল থেকে মাছ লুট হয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলায় ২৫ জানুয়ারি মনাই ও সুনই নদীর জলমহাল থেকেও একইভাবে মাছ লুট হয়। নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি উপজেলায় কাঁঠালজান ও মরাগাঙ্গে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক যানবাহনে করে হাজারো মানুষ ধনু নদীর পাড়ে জড়ো হয়, যা বড় ধরনের লুটপাটের আশঙ্কা তৈরি করে। এই ঘটনাগুলো শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়, বরং জলমহাল ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও দুর্নীতির চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ, অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহার এবং নদী-খাল-প্রাকৃতিক জলাশয় দখল ও দূষণের পাশাপাশি জলমহালসমূহের ব্যবস্থাপনায় নানা দুর্বলতা থাকায় হাওর অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকায় সংকট নিয়ে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষ মূলত কৃষি ও মৎস্য আহরণে নির্ভরশীল। অথচ জলমহাল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে হাওরের বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক ছন্দ এবং মৎস্যজীবীদের অধিকারকে উপেক্ষা করে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিবেচনায় ইজারা প্রদান করা হয়। ফলে হাওরের জলমহাল ব্যবস্থাপনায় নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং অঞ্চলভিত্তিক অভিযোজন জরুরি, যাতে স্থানীয় দরিদ্র মৎস্যজীবীরা প্রকৃতভাবে উপকৃত হতে পারেন এবং হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য অটুট থাকে।
হাওর অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা এবং দারিদ্র্যের কারণে নারীরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নানামুখী ঝুঁকির সম্মুখীন হন। নারীস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা, পুষ্টিহীনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে অজ্ঞতা, এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে। অপরদিকে, বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় মেয়েদের পড়াশোনায় ছেদ পড়ে, অনেকেই ঝরে পড়ে এবং বাল্যবিবাহের শিকার হয়। এসব চ্যালেঞ্জ নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকেও বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়াও হাওর অঞ্চলে প্রতিবছর বন্যা, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অনেক এলাকায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা খুবই কম, আর যেগুলো আছে সেগুলোও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় নিয়মিত পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিশুদের ঝরে পড়ার হার বাড়ে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও বেশি। পাশাপাশি দুর্যোগকালীন সময় নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে মানুষ জীবনহানির ঝুঁকিতে পড়ে।
হাওরের জলমহাল ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের জলমহাল ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের সকল জেলায় মোট ৩৮,৮১৮টি জলমহাল রয়েছে, যার সম্মিলিত আয়তন প্রায় ২,৮২,৬৫৯.৩৩ একর। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এসব জলমহাল থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১০৭ কোটি ২৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৫৭ টাকা। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাওর অঞ্চলে মোট জলমহালের সংখ্যা ৪,৫০৯টি এবং মোট আয়তন ১,৫১,৮১৫.৭২ একর-যা দেশের মোট জলমহালের একটি বড় অংশ। শুধু সিলেট বিভাগ থেকেই এই অর্থবছরে সরকার পেয়েছে ৩০ কোটি ২২ লক্ষ ০১ হাজার ৫১৫ টাকা। এসব তথ্য প্রমাণ করে যে, হাওরাঞ্চলের জলমহালগুলো শুধু জীববৈচিত্র্য ও জীবিকার দিক থেকে নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও জাতীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সুষ্ঠু ও ন্যায্য ব্যবস্থাপনার অভাব হলে এ খাত থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য সুফল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
জলমহাল নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা
সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ এর বেশ কিছু মৌলিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা জলাশয় নির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৫(৪) এবং ৭(৬) অনুযায়ী ইজারামূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস্তবতার সাথে অমিল থাকায় দরিদ্র মৎস্যজীবীরা ইজারায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। পাশাপাশি, ইজারার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লাভকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে জলাশয়-নির্ভর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। অনুচ্ছেদ ৩ এবং ৭ (৫) লক্ষ্য করলে দেখা যায় জলমহাল ব্যবস্থাপনায় মৎস্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততার সুযোগ সংকুচিত রয়েছে যা স্বল্প মেয়াদি ইজারাব্যবস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় বাধা সৃষ্টি করে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন স্পষ্ট না হওয়ায় সমন্বয়হীনতা দেখা দেয় এবং জলমহাল ব্যবস্থাপনায় কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, দূষণ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জলমহালের পরিবেশ ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। দুর্বল আইন প্রয়োগ ও নজরদারির অভাবে অবৈধভাবে মাছ আহরণ বেড়ে চলেছে। যদিও এলজিইডি, ভূমি মন্ত্রণালয় ও BWDB-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত রয়েছে, তবে তা বাস্তবে কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করে না।
অন্যদিকে, অযাচিত হস্তক্ষেপ, অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতমূলক ইজারার ফলে প্রকৃত ও দরিদ্র মৎস্যজীবীরা ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। নীতিমালায় দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেবার কথা বলা থাকলেও বাস্তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা ইজারা নিয়ে লাভবান হচ্ছেন, ফলে সামাজিক বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইজারা প্রক্রিয়া জটিল ও প্রভাবিত হওয়ায় দরিদ্র মৎস্যজীবীরা সহজে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। প্রকৃত মৎস্যজীবী ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিসমূহ দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই হয় না। নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিসমূহ সহজে ঋণলাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহল মাছের খামার গড়ে তুলে জলাশয়ের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছেন, যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তবে সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ -এর আলোকে বাংলাদেশের সকল সরকারি জলমহালের সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৪ প্রণয়নের কাজ ভূমি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। তবে যে কোন খসড়া চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।
জলমহাল ব্যবস্থাপনায় বিবেচ্য বিষয় ও সুপারিশসমূহ
১. সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ এর দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২. স্থানীয় জনগোষ্ঠী, নিরপেক্ষ ও বিশেষজ্ঞ (মৎস্য ও পরিবেশ) সদস্য সম্বলিত অন্তর্ভুক্তিমূলক জেলা ও উপজেলা জলমহাল কমিটি গঠন করা।
৩. ইজারা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত দরপত্র চালুর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৪. প্রকৃত মৎস্যজীবীদের তালিকাভুক্ত করে হালনাগাদ আইডি কার্ড প্রদান, সরকারি ভর্তুকি ও বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একটি জলমহালভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠন এবং সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই ইজারা সুবিধা নিশ্চিত করা।
৫. নীতিমালায় প্রকৃতিবান্ধব ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া, মাছের প্রজনন মৌসুমে মনিটরিং ও আইন প্রয়োগ জোরদার করা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৬. ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া জলমহাল খনন ও পুনরুদ্ধার জোরদার করা।
৭. রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের স্বার্থ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া।
৮. জলমহালের তথ্যভান্ডার প্রতি ৫ বছর অন্তর হালনাগাদ এবং বন্ধ ও আধা-বন্ধ জলাশয়ের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা।
হাওর ব্যবস্থাপনায় বিবেচ্য বিষয় ও সুপারিশসমূহ
১. হাওর অঞ্চলের দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য ভিজিডি কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করে খাদ্য ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. সকল প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩. হাওর অঞ্চলে যেকোনো সড়ক ও অবকাঠামোগত প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত উপযুক্ত, বিজ্ঞানভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ সম্ভাব্য সামাজিক ও পরিবেশগত অভিঘাত মূল্যায়ন করা।
৪. হাওর ও জলাভূমির ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সকল অধিদপ্তর ও সংস্থাকে শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানো।
৫. হাওরের প্রকৃত গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা জোরদার করার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এমন সকল অবকাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করা।
৬. হাওর অঞ্চলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত ধাত্রী ও স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭. দুর্যোগপ্রবণ হাওর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য (বিদ্যালয়-আশ্রয়কেন্দ্র) দুর্যোগ সহনশীল ভবন নির্মাণ করা।